বিশ্বজুড়ে স্যামসাং একটি পরিচিত ব্র্র্যান্ড। স্যামসাং এর কালচার ছিল ইনওয়ার্ড লুকিং। ১৯৯০ দশকে স্যামসাংয়ের চেয়ারম্যান, লি কুন ই একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি কোম্পানির মেধাবী ইয়ং এমপ্লয়িদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। এদের কাজ ছিল সেখানকার ভাষা ও সংস্কৃতি জানা এবং নেটওয়ার্ক তৈরি করা। যাতে স্যামস্যাং সব জায়গায় সহজে পণ্য সরবরাহ করতে পারে। ভবিষ্যতের জন্য এটি অসাধারণ একটা বিনিয়োগ ছিল। ১৯৯০ সালে সামস্যাং ৪৭০০ এমপ্লয়িকে ৮০টি দেশে পাঠিয়েছে। স্যামস্যাং এদেরকে রিজিওনাল স্পেশালিস্ট হিসেবে আখ্যা দিয়েছে । কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট শুরুতে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশয়ে থাকত। শুধুমাত্র খরচের চিন্তা নয়, কোম্পানি ইয়ং স্টারদের ১৫ মাসের জন্য হারাতো। রিজিওনাল স্পেশালিস্টদের অন্য কোম্পানিতে চলে যাওয়ারও ঝুঁকি ছিল।
ফ্রি শিপিং ও ফ্রি রিটার্ন
সান ফ্রান্সিসকো শহরের Nick Swinmurn নামক মানুষটি ১৯৯৭ সালে অনলাইনে জুতা বিক্রয়ের চিন্তা করেন। বিভিন্ন বিনিয়োগকারীদের সাথে দেখা করে তিনি পাত্তা পাচ্ছিলেননা। বেশ কিছুদিন ঘুরাঘুরি করে তিনি একটি ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির মালিক Tony Hsieh এর সাথে দেখা করলেন। সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত দেখে Tony Hsieh উক্ত আইডিয়াটি কিনে নেন।
shoesite.com নামে যাত্রা শুরু করলেও এটির নাম হয় Zappos। গ্রাহকরা অনলাইনে জুতা অর্ডার করতো এবং যে জোড়া জুতা ফিট হতোনা সেটি ফেরত দিতো। শুরুর দিকে গ্রাহকদের মধ্যে সার্ভিস নিয়ে ভীতি ছিল। কিন্তু কোম্পানি তার উদ্ভাবিত ‘রিটার্ন পলিসির‘ সুন্দর বাস্তবায়নে গ্রাহকদের সকল টেনশন দূর করে। সমসাময়িক অন্যান্য কোম্পানিও ফ্রি ডেলিভারি দিতো। কিন্তু Zappos ’ফ্রি ডেলিভারির’ সাথে ’ফ্রি রিটার্ন ’ চালু করে। জুতা পছন্দ না হলে ৬০ দিনের মধ্যে রিটার্ন – এই পলিসি দিয়ে Zappos ব্যবসা চালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে তারা ৩৬৫ দিনের রিটার্ন পলিসি চালু করে। এমনও উদাহরন রয়েছে একজোড়া জুতা নেওয়ার জন্য একজন গ্রাহক ৮ জোড়া জুতা পর্যন্ত অর্ডার দেয় এবং পছন্দ না হওয়ায় ফেরত পাঠায়। এইরূপ সুবিধা পেয়ে গ্রাহক কোম্পানিকে ভালবাসতে থাকে। ব্রান্ড খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে । কোম্পানিও সহজে বুঝতে পারলো যে, এই প্রক্রিয়ায় গ্রাহকের সাথে একটা বিশেষ সম্পর্ক তৈরি করা যায়। এটাই মূল বেনেফিট। কোম্পানি বড় হতে থাকে। ২০০৭ সালে Nike কোম্পনিও তাদের সাথে যোগ দেয়। ২০০৯ সালে অ্যামাজন জেপোসকে কিনে নেয়। ব্যবসায়িক বৈচিত্র আনতে তারা এখন রেডিমেড পোশাকও ডেলিভারি করছে।
Zappos একটি ছোট স্টার্ট আপ কোম্পানি থেকে আজ বিশ্বখ্যাত ব্রান্ড। Tony Hsieh এর প্যাশন, সংকল্পে নির্মিত স্বপ্নটি আজ বাস্তবতা। গ্রাহকসেবায় এক অন্যন্য উদাহরণ।
মিথ্যার বেসাতি
ছোটবেলায় হাতের লিখা সুন্দর করতে হোম টিউটর যে কটি লাইন বেশি লিখত তার মধ্যে ছিল Don’t tell a lie । টিউটর একদিকে নীতি শিক্ষা দিতেন । অন্য দিকে লেখা সুন্দর করার সাধনা চালাতেন। আজকাল তো মিথ্যা কথা প্রমাণ হলে বন্ধু-বান্ধব বলে, এই একটু চাপা মারলাম। তো মিথ্যা বলা বা চাপা মারা/ সত্য এড়িয়ে চলার অভ্যাস থেকে অফিসের বড় স্যারের নিকট আপনার অবস্থান নষ্ট হতে পারে।
পশ্চিমা লেখক Chris Haroun মিথ্যা শনাক্ত করার কয়েকটি টিপস দিয়েছেন যেমন:
১. একজন মিথ্যাবাদী প্রশ্নের দীর্ঘ উত্তর প্রদান করে। সরাসরি হ্যা অথবা না বলেনা
২. উত্তর দেয়ার সময় আই কন্ট্যাক্ট করেনা
৩. কথা বলার সময় মুখে হাতে দিয়ে থাকে
৪. এ সময়ে তার পা নাড়াচাড়া করে
অসাধারণ হতে লাগবে গতি
গত বছর মাঝবয়সী একটা গ্রুপের সাথে মর্নিং ওয়াক শুরু করেছিলাম। তবে সেটি হেলে-দুলে নয়। ঘাম ঝরানো হাটা। বড় বড় কদম ফেলে। কয়েকদিন ধরে খেয়াল করলাম সিনিয়র এই ব্যক্তিদের গতির সাথে আমার তাল মেলাতে কষ্ট হচেছ। এর মধ্যে ২ জনের সাথে কোনভাইে পেরে উঠছিনা। তারা ২ জনই আমার থেকে প্রায় ১০-১৫ বছরের বড়। একজন ১০ হাজার শ্রমিক নিয়ে পরিচালিত গার্মেন্টস কোম্পানির মালিক। অন্যজনের ফ্যাক্টরিতে ৩ হাজার শ্রমিক কাজ করে। চিন্তার জগতে আলোড়ন ! এই গতি দিয়ে তো তারা বাজিমাত করেছে। প্রতি সেকেন্ডে তারা এগুচ্ছেন। পাশের লোকগুলোর সাথে তাদের ক্রমশ গতির পার্থক্য তৈরি হচেছ। প্রাপ্তির পার্থক্য তৈরি হচ্ছে। বিষয়টি তাদের নিকট শেয়ার করলাম। দেখলাম খুব মজা পেলেন। যেন তৃপ্তির হাসি। সফলতার হাসি।
চাকরি হারালেই সব শেষ নয়
চাকরি হারিয়েছেন কিন্তু পরবর্তীতে ভিন্ন ইতিহাস তৈরি করেছেন এরূপ কিছু মানুষ আমাদের জন্য ইন্সপায়ারেশন হতে পারে।
Julia Carolyn Child লস অ্যাঞ্জেলসে হোম ফার্নিচার কোম্পানির অ্যাডভারটাইজিং ম্যানেজার ছিলেন। কয়েক মাস পরই তার চাকরি চলে যায়। কিছুদিন গবেষণা সহায়ক হিসেবে স্বেচ্ছাসেবী ছিলেন। অতপর ফ্রেঞ্চ রান্না শিখেন। আমেরিকানদের জন্য লিখেন ‘মাস্টারিং দ্য আর্ট অব ফ্রেঞ্চ কুকিং’ এবং এ বিষয়ে টিভিতে অনুষ্ঠান করেন। হয়ে উঠেন বিখ্যাত টেলিভিশন আইকন।
পাবলিকেশনে কর্মরত ওয়াল্ট ডিজনি তার অ্যানিমেশননের প্রথম চাকরি হারান এইজন্য যে, তার নিকট ভালো আইডিয়া নেই । তিনি এবং তার কয়েক ভাই মিলে গড়ে তুলেন ডিজনি ব্রাদার্স স্টুডিও। ‘মিকি মাউস‘ ও ‘ডিজনিল্যান্ড’ সৃষ্টি করে বিশ্বখ্যাত হয়ে আছেন তিনি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর লন্ডন অফিসে প্রশাসনিক সহকারী ছিলেন জে কে রাওলিং। অফিসের কম্পিউটারে ব্যক্তিগত লেখালেখির করতে গিয়ে চাকরি হারান। পরবর্তীতে সৃষ্টি করেন বিখ্যাত হ্যারি পটার সিরিজ। তিনি এখন মাল্টিবিলিওনিয়ার লেখক।
অপরাহ উইনফ্রে ছিলেন নিউজ রিপোর্টার। বাল্টিমোর টিভি স্টেশনের প্রডিউসার তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেন, কিন্তু ডে টাইম টিভি শো এর উপস্থাপনার জন্য অফার করেন। বাকিটা ইতিহাস। তিনি এখন টেলিভিশন আইকন। ৩ বিলিয়ন ডলারের মালিক।
Sallie Krawcheck ২০১১ সালে নতুন সিইও কর্র্তৃক সংস্কারের অংশ হিসেবে Bank of America থেকে অব্যহতি পান। তখন তিনি ইনভেস্টমেন্ট ম্যনেজমেন্টে ডিভিশনের প্রধান ছিলেন। পরবর্তীতে আমেরিকান নারীদের জন্য Ellevest নামক একটি ডিজিটাল ইনভেস্টমেন্ট প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেন। তার টার্গেট ছিল নারীদের ফাইন্যান্সিয়াল লক্ষ্যগুলোকে সফলতায় রূপ দেওয়া। সিকিউরিটিজ ইন্ডাস্ট্রির রিসার্চ অ্যানালিস্ট হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে।
সমালোচনা চুপিচুপি সরাসরি
সিলিকন ভ্যালির কোম্পানি ‘Splunk’ এর প্রাক্তন সিইও Godfrey Sullivan । তাকে সিলিকন ভ্যালির অন্যতম আইকন সিইও বলা হয়ে থাকে। সুল্লিভান তার কোম্পানির বেশ প্রবৃদ্ধি এনে দেন। প্রবৃদ্ধির অনেকগুলো কারনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ইমপ্লয়িদের প্রোডাক্টিটিভিটি পুরোপুরি বের করে আনার জন্য তিনি পাবলিকলি বা সবার সামনে তাদের ভুল ধরতেননা বরং ভালো ইফোর্টগুলোর জন্য বাহবা দিতেন। যখন তিনি মনে করতেন ইমপ্লয়ির ভুলের গঠনমূলক সমালোচনা করা উচিত, তখন তিনি তাকে ডেকে নিয়ে ওয়ান টু ওয়ান মিটিং করতেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি আলোচনা করতেন ও ভুল শুধরিয়ে দিতেন। এইধরনের কর্পোরেট কালচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ খ্যাতি অর্জন করেন।
কর্পোরেট অফিসে কেউ কেউ কলিগদেরকে যথেষ্ট পজেটিভ ফিডব্যাক দেননা। এমনকি ক্রিটিসাইজ করার ক্ষেত্রে ভুল অ্যাপ্রোচ ব্যবহার করেন। ভুল করলে অবশ্যই ভুল ধরতে হবে, তবে সেটি উপরোক্ত কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে করা যেতে পারে।
সেলিব্রেটিদের মতো
একজন সাকসেসফুল মানুষ। একইসাথে সেলিব্রেটি। মঞ্চের দিকে এগুচ্ছেন। যেতে যেতে সবার সাথে মুচকি হাসলেন। হাত নাড়লেন। কেমন আছেন টাইপ প্রশ্ন করলেন। কারও কারও নাম জিজ্ঞেস করলেন। মঞ্চে উঠে বক্তৃতা শুরু করলেন। এক ফাকে একটু আগে শুনে মনে রাখা দুই-এক জন মানুষের নামও উচ্চারণ করলেন। মনে হল কত যে আপন তিনি।
হ্যাঁ, আমরা সে লোকগুলোকে পছন্দ করি, যারা তার নামটি সঠিকভাবে মনে রাখে ও সুন্দর করে সম্বোধন করে। সুতরাং বিজনেসের সাথে সম্পৃক্ত মানুষগুলোকে আজীবনের বন্ধু হিসেবে ভাবুন। আলাপে বা গল্পের শুরুতে তাদের সাথে বিজনেস টপিক নয়। ব্যক্তিগত প্রশ্ন দিয়ে শুরু করতে পারি। কিভাবে তার ছুটির দিন ব্যয় হয়, তার বাচ্চারা কোন স্কুলে পড়ে, বাবা-মা কেমন আছেন অথবা তার ফেবারিট খেলাধুলার কথা জিজ্ঞেস করি। মানুষগুলোর সাথে বন্ধুর মত আচরণ করি, আন্তরিকভাবে কথা বলি যেভাবে সেলিব্রেটিরা করে থাকেন ।
কতজন মানুষ আমাকে আপনাকে চিনে
সেদিনের মত অফিস শেষ। মাগরিব নামাজ শেষে বের হবার প্রস্তুতি। অধিকাংশ কলিগ বের হয়ে গেছেন। সিনিয়র ভাই, পিয়নসহ আমরা ৩ জন সবার শেষে বের হলাম। সিনিয়র ভাই পিয়নকে অফার করলেন, চলো তোমাকে আজ ডিম খাওয়াব। না স্যার, ধন্যবাদ। রিপ্লাই দিল পিয়ন। আরে না খাইয়া ধন্যবাদ নয়। খাইয়া ধন্যবাদ দাও। চলো। বললেন বড় ভাই। তিনজনে বিট লবন মাখিয়ে গরম গরম ফুল বয়েলড ডিম খেলাম। সাথে টুকটাক গল্প-কৌতুকও চলল। পিয়ন ভাইয়ের চোখে আমি অন্যরকম তৃপ্তি দেখলাম। এটি আহামরি কোন নাশতা নয়। বাট মনে হয় তাকে কেউ এভাবে আদরমেখে ডেকে অফার করেনি অনেকদিন।
প্রবাদ আছে, ‘আপনি কতজন মানুষকে চেনেন সেটি বড় কোন বিষয় নয়। কতজন মানুষ আপনাকে চেনে সেটি বড় ব্যাপার।’ কথাটাকে যদি বৃহৎআঙ্গিকে বলি, কতজন মানুষ আপনাকে ভালো জানে এবং মনে রাখে সেটি অবশ্যই বড় বিষয়। যদি আপনি আপনার কোম্পানিতে একটি অবস্থান তৈরি করতে চান তাহলে আপনাকে coworker দের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে সর্বাতœক চেষ্টা করতে হবে। যাকে বলা যায় extraordinary relationship. শুধুমাত্র নিজের ডিপার্টমেন্ট নয়, অন্য ডিপার্টমেন্টের কলিগদের সাথেও সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করা প্রয়োজন।
যখন আপনি নতুন চাকরি শুরু করেন, আপনি অফিসের যেকোন লেভেলের সহকর্মীদের সাথে চা-কফি বা লাঞ্চ করতে পারেন। ইন্টারনালি এইধরনের নেটওয়ার্ক থেকে আপনি কোম্পানির কালচারগুলো সম্পর্কে যথেষ্ট জানতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন।
দু’জন দু’জনার: কোম্পানি ও এমপ্লয়ি
ঢাবি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর মো. আক্কাস স্যার ক্লাস নিচ্ছেন। শুরু করলেন এমপ্লয়িবেলিটি টপিক (employability)। এটা তো জানি। এমপ্লয়িবালিটি মানে একজন এমপ্লয়ির চাকরি করার যোগ্যতা ও দক্ষতা। না, তিনি একটু ভিন্নভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন। বিজনেস অনুষদের ডিগ্রিপ্রাপ্ত সকলেই বিষয়টি জানেন। কিন্তু ভিন্ন ডিসিপ্লিনের ছাত্র হিসেবে আমাকে বেশ আকর্ষণ করলো। স্যার বললেন, এমপ্লয়িকেই নিজ দায়িত্বে তার ডেপেলপমেন্ট চালিয়ে যেতে হবে যাতে করে চাকরির বাজারে তার মূল্য বজায় থাকে, অফিসে তার কদর থাকে বা গুরুত্ব থাকে। কিন্তু এটি তো কোম্পানির দায়িত্ব, কোম্পানি তার এমপ্লয়িকে ট্রেনিং করাবে, প্রয়োজনীয় স্কিল উন্নয়নে প্রোগ্রাম হাতে নিবে।
এবার একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। আমার একজন শ্রেেদ্ধয় স্যার। নাম মিরাজ স্যার (কাল্পনিক নাম)। বয়স ৫০। সুদর্শন, পোশাকে পরিপাটি ও চটপটে। কিন্তু কম্পিউটারের মাউসের কার্সর জায়গা মতো নিতে তার কষ্ট হয়। তাই হেল্প করলে, না করেননা। আফসোস করে বলেন, যখন ব্রাঞ্চে একটি কম্পিউটার ছিল, আমি ছিলাম কম্পিউটার রুমের দায়িত্বে। কম্পিউটারের বস। সময়ের ব্যবধানে আজ মাউস ধরতেও আমার বেগ পেতে হয়। টাইপ তো অনেক দূরের কথা। তার মানে সময়ের সাথে না চলার কারনে তার সাথে বর্তমান প্রযুক্তির বেশ দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। আমি আতঁকে উঠি, একদিন কি আমারও এমন হবে? আমিও তো নতুন কিছু শিখছিনা।
এবার আক্কাস স্যারের টপিকটা নিয়ে নেটে কিছুটা ঘাটাঘাটি করি। পাওয়া গেল চাকরিপূর্বের এমপ্লয়িবালিটি, চাকরি পরবর্তী কোম্পানি কর্তৃক এমপ্লয়িবালিটি ও স্ব-উদ্যোগে এমপ্লয়িবালিটি। স্ব-উদ্যোগে এমপ্লয়িবালিটি যেহেতু নিজের হাতে সেহেতু এবিষয়ে সবসময় আমাদের তৈরি থাকা উচিত। নতুন প্রযুক্তি আসে। নতুন সফটওয়্যার আসে। আমাদের এসব বিষয়ে খোজ রাখা উচিত। দেশ-বিদেশের জার্নালে নতুন থিওরি বা কনসেপ্ট আসে। খোজ রাখা প্রয়োজন নিজের স্বার্থে। পরে জানবো করে করে, কয়েকবছর পর বহু কিছু অজানা থেকে যায়। আর নিজেকে পিছিয়ে রাখা হয়। নতুন জেনারেশন আসে, তাদের প্রতি নির্ভরতা বাড়ে।
এমপ্øয়িবালিটির বা কর্মদক্ষতার এই আইডিয়া এমপ্লয়ির ব্যক্তিগত মোটিভেশনের উপর নির্ভরশীল। শুধুমাত্র কোন বিষয়ে জানা বা তা কিভাবে করতে হয় এর উপর এমপ্লয়িবালিটি নির্ভর করেনা। বরং অর্জিত জ্ঞান বা দক্ষতা তিনি ব্যবহার করতে ইচ্ছুক কিনা তার উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ ইচ্ছুক ব্যক্তিই কেবলমাত্র ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট দৌড়ে যোগ দিতে পারেন।
এমপ্লয়িবালিটি এমন এটি সম্পদ যা ব্যক্তিকে যেকোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার যোগ্য বা উপযোগী করে তোলে। এটাই এমপ্লয়ির মার্কেট ভ্যালু । যখন এমপ্লয়ির মার্কেট ভ্যালু তৈরি হয়ে যায়, তখন কোম্পানি তাকে অপরিহার্য ভাবে। সহজে ছাড়তে চায়না। কোম্পানি নিজের স্বার্থে তাকে বিবিধ সুবিধা প্রদান করে কোম্পানিতে ধরে রাখে। বিষয়টা অনেকটা এইরকম- এমপ্লয়ি নিজের স্বার্থে নিজেকে ডেভেলপ করবে. কোম্পানির কাছে নিজেকে অপরিহার্য করে তুলবে । আর কোম্পানি তার স্বার্থেই এই মানবসম্পদকে কাজে লাগাবে ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রদান করবে । মজা করে যদি বলি, দু’জন- দু’জনার।
করোনা সংকটে যে যতটুকু অবসর পাই, নিজের অ্যাবিলিটি বাড়ানার জন্য চেষ্টা করি। নিজের দূর্বল দিকগুলো লিস্ট করি এবং তা উন্নয়নে চেষ্টা করি। আপনার আশে-পাশে অনেকেই অলরেডি শুরু করেছেন। আমরা যারা এখনও পিছিয়ে আছি, আসুন জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জনে নেমে পড়ি।
শিখতেই থাকি, শিখতেই থাকি
কেন আমি প্রফিট কম পেলাম? না স্যার, আপনি প্রফিট ঠিকই পেয়েছেন। শর্ত ছিল আপনার টাকাটা টার্ম ডিপোজিট হিসেবে ৩ বছর থাকবে কিন্তু আপনি ২ বছরের পূর্বেই ক্লোজ করছেন। তাই ব্যাংক আপনাকে ২ বছরের প্রফিট রেটে মুনাফা দিচ্ছে। সফটওয়্যারে ক্যালকুলেশনটা অটোমেটিক চলে আসে। রাখেন আপনার সফটওয়্যার! আমাকে খাতা কলমে বুঝান। চলছিল এক জুনিয়র কর্মকর্তা আর গ্রাহকের বাকযুদ্ধ। অবশেষে ম্যানেজারের রুমে প্রবেশ করলেন গ্রাহক। ম্যানেজার সব শুনে ঠান্ডা মাথায় তাকে হিসাব বুঝিয়ে দিলেন। তিনি আমতা আমতা করে বিষয়টা বুঝলেন। কিন্তু তাকে এতক্ষন জুনিয়র কর্মকর্তারা বুঝাতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। ম্যানেজার তার অভিজ্ঞতা আর দক্ষতা দিয়ে বিষয়টা সহজেই সমাধান করলেন।
আপনার সুপারভাইজার বা ইনচার্জ থেকে প্রাকটিক্যালি আপনি অনেক কিছু শিখতে পারেন। কিভাবে তিনি তার কাজে সফল হচ্ছেন আপনি তা অবজার্ভ করুন। তিনি কিভাবে তার টিমমেটদের ম্যানেজ করছেন বা পরিচালনা করছেন সেটিও দেখার বিষয়, শেখার বিষয়। তার বিহেভিয়ারে সহকর্মীরা কিভাবে তাকে ফলো করছে, কিভাবে টার্গেটগুলো পূরণে করছে, সেটি থেকেও শেখা যায়। কোন উপায়ে তিনি তাদেরকে অনুপ্রাণিত করছেন, সহকর্মীদের নেগেটিভ প্রতিক্রিয়ায় তিনি কিভাবে সুন্দর আচরণ করছেন। কিভাবে ক্লায়েন্ট হ্যান্ডেল করছেন। কোন সব শব্দ দিয়ে তাদেরকে শান্ত রাখছেন। এই বিষয়গুলো থেকে লেসন নিন। তার আর কি কি যোগ্যতা থাকলে অধিকতর ভালো হত ? সেসব বিষয়ে সচেতন বা স্কিলড হয়ে আপনি আরও বেশি নিজেকে পূর্ণতা দিতে পারেন