ঢাবি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর মো. আক্কাস স্যার ক্লাস নিচ্ছেন। শুরু করলেন এমপ্লয়িবেলিটি টপিক (employability)। এটা তো জানি। এমপ্লয়িবালিটি মানে একজন এমপ্লয়ির চাকরি করার যোগ্যতা ও দক্ষতা। না, তিনি একটু ভিন্নভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন। বিজনেস অনুষদের ডিগ্রিপ্রাপ্ত সকলেই বিষয়টি জানেন। কিন্তু ভিন্ন ডিসিপ্লিনের ছাত্র হিসেবে আমাকে বেশ আকর্ষণ করলো। স্যার বললেন, এমপ্লয়িকেই নিজ দায়িত্বে তার ডেপেলপমেন্ট চালিয়ে যেতে হবে যাতে করে চাকরির বাজারে তার মূল্য বজায় থাকে, অফিসে তার কদর থাকে বা গুরুত্ব থাকে। কিন্তু এটি তো কোম্পানির দায়িত্ব, কোম্পানি তার এমপ্লয়িকে ট্রেনিং করাবে, প্রয়োজনীয় স্কিল উন্নয়নে প্রোগ্রাম হাতে নিবে।
এবার একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। আমার একজন শ্রেেদ্ধয় স্যার। নাম মিরাজ স্যার (কাল্পনিক নাম)। বয়স ৫০। সুদর্শন, পোশাকে পরিপাটি ও চটপটে। কিন্তু কম্পিউটারের মাউসের কার্সর জায়গা মতো নিতে তার কষ্ট হয়। তাই হেল্প করলে, না করেননা। আফসোস করে বলেন, যখন ব্রাঞ্চে একটি কম্পিউটার ছিল, আমি ছিলাম কম্পিউটার রুমের দায়িত্বে। কম্পিউটারের বস। সময়ের ব্যবধানে আজ মাউস ধরতেও আমার বেগ পেতে হয়। টাইপ তো অনেক দূরের কথা। তার মানে সময়ের সাথে না চলার কারনে তার সাথে বর্তমান প্রযুক্তির বেশ দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। আমি আতঁকে উঠি, একদিন কি আমারও এমন হবে? আমিও তো নতুন কিছু শিখছিনা।
এবার আক্কাস স্যারের টপিকটা নিয়ে নেটে কিছুটা ঘাটাঘাটি করি। পাওয়া গেল চাকরিপূর্বের এমপ্লয়িবালিটি, চাকরি পরবর্তী কোম্পানি কর্তৃক এমপ্লয়িবালিটি ও স্ব-উদ্যোগে এমপ্লয়িবালিটি। স্ব-উদ্যোগে এমপ্লয়িবালিটি যেহেতু নিজের হাতে সেহেতু এবিষয়ে সবসময় আমাদের তৈরি থাকা উচিত। নতুন প্রযুক্তি আসে। নতুন সফটওয়্যার আসে। আমাদের এসব বিষয়ে খোজ রাখা উচিত। দেশ-বিদেশের জার্নালে নতুন থিওরি বা কনসেপ্ট আসে। খোজ রাখা প্রয়োজন নিজের স্বার্থে। পরে জানবো করে করে, কয়েকবছর পর বহু কিছু অজানা থেকে যায়। আর নিজেকে পিছিয়ে রাখা হয়। নতুন জেনারেশন আসে, তাদের প্রতি নির্ভরতা বাড়ে।
এমপ্øয়িবালিটির বা কর্মদক্ষতার এই আইডিয়া এমপ্লয়ির ব্যক্তিগত মোটিভেশনের উপর নির্ভরশীল। শুধুমাত্র কোন বিষয়ে জানা বা তা কিভাবে করতে হয় এর উপর এমপ্লয়িবালিটি নির্ভর করেনা। বরং অর্জিত জ্ঞান বা দক্ষতা তিনি ব্যবহার করতে ইচ্ছুক কিনা তার উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ ইচ্ছুক ব্যক্তিই কেবলমাত্র ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট দৌড়ে যোগ দিতে পারেন।
এমপ্লয়িবালিটি এমন এটি সম্পদ যা ব্যক্তিকে যেকোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার যোগ্য বা উপযোগী করে তোলে। এটাই এমপ্লয়ির মার্কেট ভ্যালু । যখন এমপ্লয়ির মার্কেট ভ্যালু তৈরি হয়ে যায়, তখন কোম্পানি তাকে অপরিহার্য ভাবে। সহজে ছাড়তে চায়না। কোম্পানি নিজের স্বার্থে তাকে বিবিধ সুবিধা প্রদান করে কোম্পানিতে ধরে রাখে। বিষয়টা অনেকটা এইরকম- এমপ্লয়ি নিজের স্বার্থে নিজেকে ডেভেলপ করবে. কোম্পানির কাছে নিজেকে অপরিহার্য করে তুলবে । আর কোম্পানি তার স্বার্থেই এই মানবসম্পদকে কাজে লাগাবে ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রদান করবে । মজা করে যদি বলি, দু’জন- দু’জনার।
করোনা সংকটে যে যতটুকু অবসর পাই, নিজের অ্যাবিলিটি বাড়ানার জন্য চেষ্টা করি। নিজের দূর্বল দিকগুলো লিস্ট করি এবং তা উন্নয়নে চেষ্টা করি। আপনার আশে-পাশে অনেকেই অলরেডি শুরু করেছেন। আমরা যারা এখনও পিছিয়ে আছি, আসুন জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জনে নেমে পড়ি।
Subscribe
0 Comments