Posts in Brand Story

Employee of Apple brand

অ্যাপলের একজন কাস্টমার (কার্ডিফ, ইউকে) টুইটার বার্তায় লিখলেন, ‘একটু আগে আইফোনের নতুন রিপ্লেসমেন্ট পেলাম। যদিও স্ক্রিনটি আমার দোষেই ভেংগে গিয়েছিল।’ আরেকজন টুইট করলেন, ‘আমার মায়ের আইফোনটি পানিতে পড়ে যায়। হার্ডওয়ারের ক্ষতি হয়। আমিও ব্রান্ড নিউ রিপ্লেসমেন্ট পেলাম।’এক্সপেরিয়েন্সগুলো একদমই নতুন কিছু নয়। প্রকৃতপক্ষে আইফোন অ্যাপল স্টোর হতে ক্রয় করলে মাত্র ১ বছরের ওয়ারেন্টি দেয়া হয়। তাও আবার নানান রকম শর্ত থাকে। কিন্তু তাই বলে ফোন পানিতে ফেলে দেবে আর নতুন রিপ্লেসমেন্ট দাবি করবে এবং কোম্পানি নতুন দিবে- বিষয়টি এইরকম নয়। তবে অ্যাপলের ইমপ্লয়িরা মাঝে মাঝে এমনটি করে থাকে এবং এই ধরণের সিদ্ধান্ত নিতে তাদেরকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এইজন্য অ্যাপল যথেষ্ট ট্যালেন্ট এবং সাহসী ইমপ্লয়ি নিয়োগ দিয়ে থাকে । তারা কাস্টমারের সাথে সম্মানজনক ব্যবহার করে ও সুবিবেচনাযোগ্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

আপনি কোম্পানির মালিক। আপনি আপনার ইমপ্লয়িদের এমনভাবে empowered (সিদ্ধান্ত নেবার সামর্থ) করতে পারেন যাতে তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ইমপাওয়ার্ড এমপ্লয়ি কোম্পানির কাজে ভাল এনগেইজমেন্ট বা সম্পৃক্ততা থাকে। তারা ইমোশনালি কানেক্টেড হয় তাদের কাজে এবং গ্রাহককে সর্বোচ্চ সার্ভিস দিয়ে থাকে। এনগেইজমেন্ট কম আছে এমন এমপ্লয়ি প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করে। ফলে টার্নওভার কষ্ট বাড়ে, প্রোডাক্টিটিভিটি কমে এবং টিমমেটদের সাথে একতার ঘাটতি থাকে।

I love how reasonable Apple is, they have strict policies, but they know how to make good experience- Joel K.

Interl Inside ব্রান্ড হয়ে উঠার গল্প

১৯৯০ সালের দিকে হোম ইউজাররা ডেস্কটপ কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশ যেমন কি বোর্ড, মাউস, হার্ডডিস্ক, ভিডিওকার্ড, মাদারবোর্ড এবং মাইক্রোপ্রসেসর ইত্যাদির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিষয়ে খুব বেশি জানতেননা। কাউকে যদি বলা হতো তোমার ফেবারিট মাইক্রোপ্রসেসর কোনটি। লোকে বলতে পারতো না। লোগো নিয়ে বৈপ্লবিক স্ট্রাটেজি ইন্টেলকে বিশ্বখ্যাত ব্রান্ডের স্বীকৃতি এনে দেয়।

ইন্টেল ও অন্যান্য চিপ প্রস্তুতকারকরা প্রতি ২ বছরের মধ্যে নতুন জেনারেশনের প্রসেসর আনতো। ১৬ বিটের পরে ৩২ বিটের প্রসেসর। মানুষ নতুন সংস্করন কিনতে চাইতো না। পূর্বের ভার্সনের তুলনায় পরের ভার্সন বেশি কার্যক্ষমসম্পন্ন এবং অন্যান্য কোম্পানির প্রসেসরের চেয়েও ইন্টেলের প্রসেসর অপেক্ষাকৃত দ্রতগতির -বিষয়টি গ্রাহকরা বুঝতোনা। এর মধ্যে ৪র্থ জেনারেশনের মাইক্রোপ্রসেসর আসলো।

ইন্টেল নিজেদের ব্রান্ডিং নিয়ে চিন্তা শুরু করলো। শুরুতে ‘intel inside’ ট্যাগ লাইনটা সংযুক্ত করতে তারা কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থ ছিল। কারন অন্যান্য কোম্পানির প্রোডাক্টের সমন্বয়ে একটা পরিপূর্ণ পিসি হতো। তাই অন্য কোম্পানির স্বার্থের দিকে খেয়াল রেখে ১৯৯১ সালে ইন্টেল ‘ইন্টিগ্রেটেড বা সমন্বিত ব্রান্ডিং প্রোগ্রাম’ হাতে নিল। ইন্টিগ্রেটেড প্রোগ্রামের মাধ্যমে ৬% রিবেট পেতে শুরু করলো চিপ ক্রেতারা। একইসাথে ইন্টেল তার পার্টনার কোম্পানিগুলোকে বিজ্ঞাপন খাতে ৫০% খরচ শেয়ার করতে বলল। শর্ত অনুযায়ী সমজাতীয় কোম্পানিগুলো তাদের প্রোডাক্টে এবং বিজ্ঞাপনে ‘intel inside’ লোগো প্রেজেন্ট করতে লাগল। ফলে গ্রাহক সহজে বুঝতে শুরু করলো যে, তারা ইন্টেলের প্রোডাক্ট ব্যবহার করছে। পত্রিকা, বিলবোর্ড ও টিভিতে বিজ্ঞাপন প্রচার হল।

সমন্বিত যে অ্যাড তৈরি হল তাতে intel এর নামটি সবার শেষে আসতো। লজিক ছিল শেষটাই গ্রাহকের মাথায় থাকে এবং পজেটিভ ইম্প্রেশন তৈরি করে। এই লোগোর সাথে স্বতন্ত্রীয় একটি মিউজিক ছিল। লোগোটা হঠাৎ করে স্ক্রীনে চলে আসতো না। স্ক্রীনে ধীরে ধীরে ভেসে উঠতো। সাইকোলজিকালে এগুলো প্রভাব ফেলে ।

ইন্টেল দীর্ঘসময় ধরে প্রসেসরে নেতৃত্বে, ফলে তাদের অর্থ ছিল পর্যাপ্ত। প্রতিযোগী কোম্পানিগুলো বিজ্ঞাপন প্রচারে পিছিয়ে ছিল। ইন্টেল একইসময়ে লো কস্ট আরেকটি প্রোডাক্ট ‘ইন্টেল সিলেরন‘ সিরিজ নিয়ে আসে যাতে লো কস্টের প্রোডাক্টগুলো ফেইস করা যায়। অবশেষে গ্রাহক চিন্তাধারায় পরিবর্তন আসে। intel inside একটি লোগো হয়ে উঠলো। হাজার হাজার পিসি নির্মাতা এখন ইন্টেলের লোগো ব্যবহারের লাইসেন্স নেয় যাতে ইন্টেলের ব্রান্ডিংয়ে তাদের প্রোডাক্ট বিক্রি বাড়ে।

ব্রিলিয়্যান্ট আইডিয়া ও স্যামস্যাং

বিশ্বজুড়ে স্যামসাং একটি পরিচিত ব্র্র্যান্ড। স্যামসাং এর কালচার ছিল ইনওয়ার্ড লুকিং। ১৯৯০ দশকে স্যামসাংয়ের চেয়ারম্যান, লি কুন ই একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি কোম্পানির মেধাবী ইয়ং এমপ্লয়িদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। এদের কাজ ছিল সেখানকার ভাষা ও সংস্কৃতি জানা এবং নেটওয়ার্ক তৈরি করা। যাতে স্যামস্যাং সব জায়গায় সহজে পণ্য সরবরাহ করতে পারে। ভবিষ্যতের জন্য এটি অসাধারণ একটা বিনিয়োগ ছিল। ১৯৯০ সালে সামস্যাং ৪৭০০ এমপ্লয়িকে ৮০টি দেশে পাঠিয়েছে। স্যামস্যাং এদেরকে রিজিওনাল স্পেশালিস্ট হিসেবে আখ্যা দিয়েছে । কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট শুরুতে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশয়ে থাকত। শুধুমাত্র খরচের চিন্তা নয়, কোম্পানি ইয়ং স্টারদের ১৫ মাসের জন্য হারাতো। রিজিওনাল স্পেশালিস্টদের অন্য কোম্পানিতে চলে যাওয়ারও ঝুঁকি ছিল।

ফ্রি শিপিং ও ফ্রি রিটার্ন

সান ফ্রান্সিসকো শহরের Nick Swinmurn নামক মানুষটি ১৯৯৭ সালে অনলাইনে জুতা বিক্রয়ের চিন্তা করেন। বিভিন্ন বিনিয়োগকারীদের সাথে দেখা করে তিনি পাত্তা পাচ্ছিলেননা। বেশ কিছুদিন ঘুরাঘুরি করে তিনি একটি ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির মালিক Tony Hsieh এর সাথে দেখা করলেন। সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত দেখে Tony Hsieh উক্ত আইডিয়াটি কিনে নেন।

shoesite.com নামে যাত্রা শুরু করলেও এটির নাম হয় Zappos। গ্রাহকরা অনলাইনে জুতা অর্ডার করতো এবং যে জোড়া জুতা ফিট হতোনা সেটি ফেরত দিতো। শুরুর দিকে গ্রাহকদের মধ্যে সার্ভিস নিয়ে ভীতি ছিল। কিন্তু কোম্পানি তার উদ্ভাবিত ‘রিটার্ন পলিসির‘ সুন্দর বাস্তবায়নে গ্রাহকদের সকল টেনশন দূর করে। সমসাময়িক অন্যান্য কোম্পানিও ফ্রি ডেলিভারি দিতো। কিন্তু Zappos ’ফ্রি ডেলিভারির’ সাথে ’ফ্রি রিটার্ন ’ চালু করে। জুতা পছন্দ না হলে ৬০ দিনের মধ্যে রিটার্ন – এই পলিসি দিয়ে Zappos ব্যবসা চালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে তারা ৩৬৫ দিনের রিটার্ন পলিসি চালু করে। এমনও উদাহরন রয়েছে একজোড়া জুতা নেওয়ার জন্য একজন গ্রাহক ৮ জোড়া জুতা পর্যন্ত অর্ডার দেয় এবং পছন্দ না হওয়ায় ফেরত পাঠায়। এইরূপ সুবিধা পেয়ে গ্রাহক কোম্পানিকে ভালবাসতে থাকে। ব্রান্ড খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে । কোম্পানিও সহজে বুঝতে পারলো যে, এই প্রক্রিয়ায় গ্রাহকের সাথে একটা বিশেষ সম্পর্ক তৈরি করা যায়। এটাই মূল বেনেফিট। কোম্পানি বড় হতে থাকে। ২০০৭ সালে Nike কোম্পনিও তাদের সাথে যোগ দেয়। ২০০৯ সালে অ্যামাজন জেপোসকে কিনে নেয়। ব্যবসায়িক বৈচিত্র আনতে তারা এখন রেডিমেড পোশাকও ডেলিভারি করছে।

Zappos একটি ছোট স্টার্ট আপ কোম্পানি থেকে আজ বিশ্বখ্যাত ব্রান্ড। Tony Hsieh এর প্যাশন, সংকল্পে নির্মিত স্বপ্নটি আজ বাস্তবতা। গ্রাহকসেবায় এক অন্যন্য উদাহরণ।