Posts in Book review

সাফল্যের পাঠশালা

বিশ্বখ্যাত ভার্জিন কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা রিচাড ব্রানসন। যুক্তরাজ্যের এই ধনকুবের ১৬ বছর বয়স থেকেই ব্যবসা শুরু করেন। ছোট খাট অনেক ব্যবসা থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক মহাকাশ ভ্রমণ পর্যন্ত ছড়িয়েছে তার ব্যবসা। রিচার্ড ব্রানসন এর ‘ স্ক্রু ইট, লেটস ডু ইট‘ বইটির বাংলা অনুবাদ হল ‘সাফল্যের পাঠশালা‘। বণিক বার্তা প্রকাশন থেকে ২০১৩ সালে এটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। বইতে রিচার্ড ব্রানসন বলছেন আমার প্রতিটি শিক্ষাই কোনো না কোনোভাবে অন্যের জীবনে কাজে লাগানোর মতো। আমরা যা হতে চাই বা যা করতে চাই, চাইলেই তা করতে পারি। প্রথম পদক্ষেপটি অত কিছু না ভেবে নিয়ে ফেলুন।

চলুন কাজটি করে ফেলি অংশে লেখক বলছেন- স্বপ্ন থাকা খারাপ নয়। আমি স্বপ্ন দেখি বাস্তবতার আলোকে। যা অসম্ভব তা নিয়ে দিবাস্বপ্ন দেখতে আমি রাজি নই। আমি লক্ষ্যে বিশ্বাসী। লক্ষ্য স্থির করি। তারপর সেখানে পৌছানোর জন্য কাজ শুরু করি।

ঝুঁকি শনাক্ত করুন অংশে লেখক বলছেন- কোনো মানুষ বা কোনো আইডিয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আমার ৬০ সেকেন্ডের বেশি লাগেনা। এক্ষেত্রে আমি বড় বড় প্রতিবেদনের চেয়ে সহজাত বোধশক্তির ওপরই বেশি নির্ভর করি।

কোনো কিছু নিয়ে কখনো আফসোস করতে নেই অংশে লেখক নিজের জীবণের উদাহারণ টেনেছেন এভাবে- ফ্রেডি আমাকে আরো পরামর্শ দিলেন, এয়ারলাইনসের টিকিট সস্তা করবেনা। সেবার মানও নিচে নামাবেনা। তাহলে বড় এয়ারলাইন্সগুলো তোমাকে বিপদে ফেলবে। — তুমি বরং টিকিটের দাম একটু বেশি ধরে সেবার মানটা তাদের চেয়ে উন্নত করো। লোকজন আরাম চায় । আর আনন্দের কথাটা তারা ভুলে যায়না। ।১৯৮৪ সালে ভার্জি আটলান্টিক যখন যাত্রা শুরু করল, সেদিন একজন মানুষও বিশ্বাস করেনি এটি এক বছরের বেশি টিকবে। বড় বড় এয়ারলাইন্সের শীর্ষ কর্মকতারা বলতে লাগলেন আমি ব্যর্থ হব। কিন্তু তাদের কেউই আর এখন এ ব্যবসায় টিকে নেই। আমি ঠিকই টিকে আছি।

এইরকম নানা উপদেশ, মোটিভেশন, রিয়েল লাইফ স্টোরি দিয়ে সমৃদ্ধ অনূদিত গ্রন্থ সাফল্যের পাঠশালা।

অনুবাদ ১০০ গ্রেট মার্কেটিং আইডিয়া

অনেকেই ফেসবুককেন্দ্রিক উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করছেন। উদ্যোক্তা বেড়ে যাওয়া সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ভালো। নতুন উদ্যোক্তাদের পণ্য বাজারজাতকরণে লেখক Jim Blythe ‘100 Great Marketing Idea’ বইটি পথ দেখাতে পারে। পড়তে পড়তে নতুন আইডিয়াও মাথায় আসতে পারে। বইয়ের শুরুতে লেখক বলছেন “সবাইকে খুশি রাখার চেষ্টা করা ভুল। বিশাল বিশাল প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকিদের জন্য কাজটা অসম্ভব। এমনকি অনেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানও আলাদা শ্রেণির কাস্টমার ধরতে নিজেদেরকে বিভিন্ন অংশে বা বিভিন্ন ব্রান্ডে ভাগ করে । বইয়ের সব আইডিয়া প্রয়োগ করতে যাবেননা। কারণ আপনার ইন্ডাস্ট্রির জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে।”

বিশ্বসেরা ব্রান্ডগুলোর মাকেটিং স্ট্রাটেজি ও আাইডিয়া অবলম্বনে লিখিত হয়েছে এই বই। বই থেকে দু’একটি আইডিয়া উল্লেখ করছি।
আইডিয়া: একটা প্রকাশনীর মাকেটিং ম্যানেজার টিজার ক্যাম্পেই চালাতে চাইলেন। মাকেটিং শিক্ষকদের নিকট চপস্টিক পাঠানো হল। প্যাকেটের গায়ে লিখা ছিল ’আগে খেয়ে নিন’। এতে শিক্ষকদের মাঝে কৌতূহল তৈরি হল। এক সপ্তাহ পর শিক্ষকদের টি-ব্যাগ পাঠানো হয়। ওপরে লিখা ছিল ’এবার পান করুন’। সবাই ভাবতে লাগল – এরপর কী আসবে? সবাই যখন অপেক্ষা করছে তখন পাঠানো হল বইয়ের একটা অধ্যায়ের স্যাম্পল। এই আইডিয়া পুরস্কার লাভ করে। মূল টাগেট ছিল মাকেটিংয়ের শিক্ষকবৃন্দ।

আইডিয়া: USP (Unique Selling Proposition) আপনার প্রোডাক্টকে অন্যদের থেকে আলাদা করে। তবে আপনি যেটাকে USP ভাবেন,কাস্টমার সেটিকে নাও ভাবতে পারে। রেস্টুরেন্টের মালিক হয়তো ভাবে, খাবারের মান হলো USP, কিন্তু কাস্টমারের চোখে ওয়েটাররাই হয়তো বেশি আকষণীয়। কে শুজ। ভালো মানের জুতা তৈরির জন্য বিখ্যাত। পরতে আরাম। টেকে বেশিদিন। অনেকেই ভাবতে পারে এটাই এই জুতোর USP । রিসার্চ করে জানা গেলো এই জুতো কে শুজের অন্য জুতোর মত শব্দ করেনা। কাস্টমারদের নিকট এটাই ছিল USP ।

এ তথ্য ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন তৈরি হল। গল্পটা এইরকম- এক স্ত্রী গোপনে স্বামীকে অনুসরণ করে দেখতে পায় তার স্বামী রেস্টুরেন্টে আরেক মহিলার সাথে খাবার খাচেছ। স্ত্রী তখন পেছন থেকে গিয়ে এক বাটি নুডুলস ঢেলে দেয় স্বামীর মাথায় । এটা সম্ভব হয়েছে কে শুজ ব্রান্ডের জুতা পরায়, কারণ কে শুজে কোনো শব্দ হয়না।

এইরকম ১০০টি আইডিয়া নিয়ে সাজানো বইটির বাংলায় অনুবাদ করেছেন এম এস সোহান ও হাসান আযীয। সম্পাদনা করেছেন মোহাম্মদ ইকরাম। নন্দন থেকে প্রকাশিত হয়েছে। রকমারি ডট কম হতে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন।

একটা দেশ যেভাবে দাঁড়ায়

একটি দেশ যেভাবে দাঁড়ায়
লেখক রউফুল আলম
(যুক্তরাষ্ট্রে ফার্মাসউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির সায়েন্টিস্ট)

১ম অধ্যায়ে লেখক বলছেন, আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি তরুণ গবেষক পাঠায় যে দেশটি, সেটা হল চীন। প্রায় ১০ হাজার, প্রতিবছর। লেখক এটাকে বলছেন ইন্টিলেকচুয়াল স্ক্যানিং। চীন হাজার হাজার ছেলেমেয়ে এখানে পাঠিয়ে গবেষণার যত ডিজাইন,অ্যারেঞ্জমেন্ট, টুলস-টেকনিক আছে সেগুলো স্ক্যান করে নিয়ে যাচ্ছে। লেখক বলছেন চীন থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। যে দেশটি সারা দুনিয়া থেকে শেখে, তাদের কাছ থেকে আমরা প্রচুর জ্ঞান বিজ্ঞান নিতে পারি।

সজাগ হওহে তারুণ্য অংশে লেখক বলছেন, আমাদের দেশের অসংখ্য ছেলেমেয়ে ২০-২২ বছর বয়সে গবেষণার কথাই জানেননা।— সারা দুনিয়ায় তরুণেরা গড়ে ২৬-২৭ এর মধ্যে পিএইচডি শেষ করেন। সম্ভাবনাকে জাগতে দিন, অংশে তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশে বলছেন, আপনার যে ছেলেমেয়েটিকে ¯্রফে একজন ডাক্তার বানাবেন, সে হয়তো তার চেয়ে অনেক বড় কিছু হওয়ার যোগ্যতা রাখে। সে সম্ভাবনাকে বের করে আনার চেষ্টাও করতে হয়।
মগজের ধ্বসংযজ্ঞ অংশে লেখক উল্লেখ করেছেন, লেখকের সায়েন্টিফিক হিরোর নাম রিচার্ড ফাইনম্যান। বিল গেটসের প্রিয় শিক্ষক। মানুষ মজা করে বলে ফাইনম্যান একটি ডায়াগ্রাম একেই নোবেল পুরস্কার পেয়ে গেছেন। —এত সরল ডায়াগ্রাম বিজ্ঞানে খুব বেশি নেই। ফাইনম্যান বলতেন, I don’t create, what I don’t understand যা বুঝিনা তা গড়ি না।

অন্তরে বাহিরে দাসত্বের রজ্জু অংশে বলছেন, নিজেকে ক্ষুদ্র মনে করাই ক্ষুদ্রতা। আফ্রিকান একটি প্রবাদ আছে If you think your are too small to make a difference, try sleeping with a mosquito.
লেখকের দেশপ্রেম তথা দেশের প্রতি আবেগকে সম্মান জানাতে হয়। তিনি বলছেন পৃথিবীর পথে পথে যেখানেই গিয়েছি, মানুষ আমাকে জিজ্ঞেস করেছে হয়ার আর ইউ ফ্রম? হৃদয়ের সমস্ত ভালো লাগা দিয়ে ঝজু শিরে বলেছি, আই অ্যাম ফ্রম বাংলাদেশ।

নিজেকে আবিস্কার করো অংশে বলছেন,আমাদের দেশটার জন্য অনেক গবেষক, উদ্ভাবক প্রয়োজন। আমাদের বিজ্ঞানের ছেলেমেয়েরা যদি শুধু বিসিএস পরীক্ষাকেই আরাধনার বিষয় মনে করে তাহলে কী করে আমরা বিজ্ঞানী ও গবেষক পাব?– ঝাঁকের সঙ্গে দৌড়ে নিজের বৃহত্তর সম্ভাবনাটুকু খুন করো না।

জাগরণের কাল অংশে লেখক সম্ভাবনার কথা বলছেন, ট্রেক্সাসে প্রায় ৫০ এর অধিক বাংলাদেশি গবেষক রয়েছেন। — যে আমেরিকায় ট্রাম্প আসার কারণে ভিসা পাওয়াটাই কঠিন হয়ে গেছে, সে আমেরিকায়ও বাংলাদেশের বহু ছেলেমেয়ে যাচ্ছেন। লেখক বলছেন, ইন্টারনেট একটা বড় রিসোর্স। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। চীনা ভাষা শেখো, জাপানি, কোরিয়ান, জার্মান, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, স্পানিশ শেখো। সুযোগগুলো লুফে নাও।
স্ট্যানফোর্ডের আকাশ অংশে বলছেন, ব্যবসা ও টেকনোলজির এক জীবন্ত জায়গা হলো ক্যালিফোর্নিয়া। ওখানে দেখা যায় একুশের তরুণেরা কোম্পানি খুলে বসে আছেন। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হচ্ছে। নতুন নতুন আইডিয়া, উদ্ভাবন, প্রচার, প্রসার, বাণিজ্য -এই চলছে সেখানে।

ফড়িংয়ের চোখ তৈরি করো অংশে লেখক বলছেন, এক গবেষক লজ্জাবতী নিয়ে গবেষণা করছেন। গবেষকরা চেষ্ট করছেন, কী করে লজ্জাবতীর চুপসে যাওয়া নিয়ন্ত্রণকারী জিনকে স্টাডি করে অন্য উদ্ভিদের শরীরে প্রবেশ করানো যায়। তিনি বলছেন, আমগাছের যদি লজ্জাবতীর মতো গুণ থাকত, তাহলে ঝড়ের দিনে বৃষ্টি বা বাতাসের স্পর্শে নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারত। ঝড়ের ধকল তাকে সইতে হতো না। এইরূপ চিন্তা আসলে -জিনের ইঞ্জিনিয়ারিং।

রউফুল আলমের চিন্তাগুলো আমাদের সন্তানদের নিকট ট্রান্সফার করতে পারি। ২০১৯ এর অমর একুশে বইমেলায় বইটি প্রকাশ হয়। ১৯২ পৃষ্ঠায় লিখিত এর মূল্য মাত্র ৩০০ টাকা। সময় প্রকাশন থেকে প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। বইটি পেতে রকমারি ডট কমে অর্ডার করতে পারেন।