আপনিই নেক্সট জেনারেশন সিইও

বিশ্বখ্যাত সিইওদের লাইফস্টাইল কী রকম? তাদের দিন শুরু হয় কখন? কোম্পানির প্রবৃদ্ধিতে এমপ্লয়ির ভেতরকার শক্তিকে কিভাবে তারা ব্যবহার করেন? কাস্টমারকে তারা কতটুকু গুরুত্ব দেন? ফিউচার ওয়ার্কপ্লেস নিয়ে তারা কী ভাবছেন? বিশ্ব নিয়ে কী ভাবেন? এসব সিক্রেটস নিয়েই বইটি সাজানো। বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন কোম্পানির মিশন, ভিশন, পারপাস, কালচার, স্ট্র্যাটেজি, ম্যানেজমেন্ট স্টাইল ইত্যাদি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বইটি লেখা হয়েছে।

প্রথাগত তত্ত্বীয় আলোচনার বাইরে বাস্তবিক উদাহরণের চমৎকার এক সংকলন যা মধ্যম সারির বিজনেস লিডারদের বেশ কাজে লাগবে। যেমন ধরুন, খ্যাতিমান সিইওরা কিভাবে মিটিং পরিচালনা করেন, কতটুকু সময় নিয়ে মিটিং করেন, সে মিটিং কিভাবে ফলপ্রসূ করেন ইত্যাদি বিষয় সংক্ষিপ্ত কিন্তু ইন্টারেস্টিং করে উপস্থাপন করা হয়েছে।

কী আছে বইতে
-লিডারশিপ সিক্রেটস
-বিশ্বখ্যাত সিইওদের লাইফস্টাইল ও হ্যাবিটস
-বিশ্বের নামী—দামি কোম্পানিগুলোর স্ট্র্যাটেজি
-ভবিষ্যৎ বিশ্বের জন্য ওয়ার্কফোর্সের প্রস্তুতি

অর্ডার করতে পারেন রকমারিতে https://www.rokomari.com/book/316111/apnee-next-generation-ceo

Honey, I’m sorry

তিনি একজন নারী। তিনি একজন মা। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন একজন লেখক হবেন। ভাবনা অনুযায়ী কাজ। কিচেনে টাইপরাইটার সেট করলেন। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে তার লেখালেখি শুরু হত। তিনি তার প্রতিটা মিনিটা ভালোবাসতেন। বাচ্চারা স্কুল থেকে ফিরে আসলে লেখালেখির ইতি টানতেন তিনি। এভাবে চললো আড়াই বছর।

একদিন রাতে তার হাজবেন্ড তার পাশে বসলো এবং বললো, Honey,I’m sorry, but you’re not bringing in any income । স্বামীর এমন কথা শুনে লেখিকার মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল। নির্ঘুম রাত। নিজের সাথে কথা নিজের কথা চললো। ইশ! সন্তান ও সংসারের পেছনে দেওয়া সময়টা থেকে যদি আরেকটু সময় মিলতো তাহলে আরও বেশি লেখা যেত! স্বপ্নবাদী লেখিকা স্বামীকে বললো আমি সত্যি সত্যিই লেখক হতে চাই । আমার সে সক্ষমতা রয়েছে। তুমি আমার পাশে থাকো। মধ্য রাতে স্বামী লাইট অন করলেন, পাশে বসে স্ত্রীকে অভয় দিয়ে বললেন All right honey, go for it । শুরু হল লেখা। নব উদ্যমে। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। চললো আড়াই বছর। ফেমিলি ট্যুর বাদ গেলো। বাদ গেলো কত সাধ আহলাদ। অবশেষে ত্যাগ, অধ্যবসায় আর হাজবেন্ডের সহযোগিতার জয় হল। ৫বছর পর লেখিকার প্রথম বই বের হল। তারপর তিনি একে একে ১০০ বই লিখে ফেললেন।

এই পর্যন্ত তার ২০০ মিলিয়নের বেশি বই মুদ্রিত হয়েছে। তাকে ক্রিসমাসের অফিসিয়াল গল্পকার বলা হয়। তার গল্প থেকে ৬টি টিভি সিরিজ নির্মিত হয়েছে। তিনি হলেন আমেরিকার বিখ্যাত লেখিকা ডেভিড ম্যাকম্বার। ওয়াশিংটনে বসবাস করেন।

হাল ছেড়োনা বন্ধু

বাচ্চাদের নিয়ে করা সার্ফ এক্সেলের অ্যাডে একটা ডায়লগ চমৎকার লাগে। কি সেটা? ‘আজ হেরেছি তো কী হয়েছে? কাল জিততেও পারি’। ৫টা ম্যাচ হেরে বাচ্চাদের উপর অভিমান করে কোচ প্রাকটিস করাবেন না বলে ঘোষণা দিলে বাচ্চাদের মন খারাপ হয়। আর তখন এক বাচ্চা ডায়লগটি দেয়। অবশ্যই প্রেরণাদায়ক কথা।


জ্যাক মা বলেন, আপনি যদি হাল ছেড়ে না দেন তাহলে এখনো আপনার সুযোগ আছে, ছেড়ে দেওয়াই হলো সবচেয়ে বড় পরাজয়। জ্যাক যখন আলীবাবা ও আলী পে সার্ভিস শুরু করেন তখন তার ঘনিষ্ঠজনেরা বলতেন তোমার সফল হওয়ার সম্ভাবনা জিরো। সকল ‘না’ চিন্তাকে দূরে ঠেলে তিনি লেগে থাকলেন। আলী পে -এর রেজিস্টার্ড ইউজার এখন ৪০০ মিলিয়ন, লেনদেন হয় প্রতিদিন ১৭৫ মিলিয়নেরও বেশি, যা আমেরিকার মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। জ্যাক মা-এর ভালবাসার একটা লাইন হলো “আজকের দিনটি কঠিন, আগামীকাল হবে আরও কঠিন কিন্তু পরের দিনটি হবে সুন্দর, আপনার বেশিরভাগ প্রতিভা আগামীকালকে অতীত হতে দেবেনা” (“Today is hard. Tomorrow will be worse. But the day after that will be beautiful. Most of your talent won’t make it past tomorrow”)

তার মতে -‘চ্যালেঞ্জ আলিঙ্গন করা ব্যবসা শুরুর প্রাথমিক কথা। যখন আমি উদ্যোক্তা হওয়ার জার্নি শুরু করি’ তখন থেকেই এটি শিখেছি।’ ভবিষ্যত সম্পর্কে জ্যাকের এইরূ অধ্যাবসায় এবং আশাবাদী দর্শন এসেছে তার জীবন থেকে যখন তিনি শুধু প্রত্যাখাত হচ্ছিলেন।

নাছোড় বান্দার বিকল্প উপায়

কখনো কখনো আমরা অল্পতেই দমে যাই। স্বাভাবিকভাবে কোন কাজ সম্পন্ন না হলে আমরা হাল ছেড়ে দেই। বিকল্প পথ অনুসন্ধান করিনা।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়, আমেরিকার একজন বিলিওনিয়ার H. Ross Perot এর ইচ্ছে হল ভিয়েতনামে বন্দী আমেরিকানদের ক্রিস্টমাস উপহার দিবেন। এজন্য কয়েক হাজার প্যাকেট করা হল । শিপিং এর জন্য প্রস্তুত প্যাকেটগুলো। হ্যানয়ে ডেলিভারি করার জন্য তিনি নিজস্ব বোয়িং বিমান নিয়ে যেতে চাইলেন। কিন্তু চলমান যুদ্ধের কারনে তিক্ততা এমনই যে, হ্যানয় সরকার এ বিষয়ে সম্মত হলনা। যখন আমেরিকা তাদের শহর-গ্রাম ধ্বংস করছে, তখন তাদের নিকট থেকে কোন চ্যারিটি গ্রহণ সম্ভব নয়। বিলিওনিয়ার প্রস্তাব দিল যে, আমেরিকান কন্সট্রাকশন ফার্মের মাধ্যমে সেসব নির্মাণ করে দেয়া হবে। হ্যানয় অথোরিটি রাজি হলোনা।

ক্রিস্টমাসের সময়ও কাছাকাছি চলে আসল। উপহারের প্যাকেটগুলো পাঠানো গেলনা। তাতে কিন্তু তিনি দমে গেলেননা। বিকল্প উপায় খুঁজতে লাগলেন। ভাবলেন ভিন্ন দেশ থেকে মেইল করলে কেমন হয়! যেই ভাবা সেই কাজ। তিনি নিজস্ব প্লেন নিয়ে রাশিয়ার মস্কোতে অবতরণ করলেন। মস্কোর সেন্ট্রাল পোস্ট অফিস থেকে উপহারগুলো ভিয়েতনামের ঠিকানায় মেইল করলেন। মজার ব্যাপার, এ প্যাকেটগুলো ইনটেক্ট অবস্থায় ডেলিভারি হয়েছিল।

প্রচেষ্টা ছাড়াই H. Ross Perot উপহার পাঠানোর উদ্যোগ বাতিল করতে পারতেন। বেচারা নাছোড় বান্দা। । বিকল্প উপায় বের করেই উদাহরণ তৈরি করলেন।

তিনি লিডার হতে চান

মিস্টার আসিফ একটি ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট চেয়ারম্যান। স্বাভাবিকভাবেই ভর্তি পরীক্ষা কমিটি, জাতীয় দিবস পালনসহ ইউনিভার্সিটির বাস্তবায়ন কমিটিতে তার স্থান পাওয়ার কথা। কিন্তু কেন যেন তিনি এইজাতীয় কমিটিতে ডাক পাননা। যেটি বিব্রতকর সেটি হল তার ডিপার্টমেন্ট থেকে একজন জুনিয়ার লেকচারার দায়িত্বগুলো পান এবং তিনিও আন্তরিকতার সাথে তা পালন করেন। চুপচাপ শান্ত স্বভাবের মিস্টার আসিফ এব্যাপারে খুব মনোকষ্টে থাকেন।

এক চায়ের আড্ডায় বাল্যকালের বন্ধুকে বলেন বিষয়টি। বন্ধু আবার মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির জিএম পদে আছেন। সমস্যার কথা শুনে হাসতে লাগলেন বন্ধুটি। তোর বুঝি নেতাগিরি করতে মন চায়! ঠাট্টা করে বলতে লাগলেন, তা শুধু মনে চাইলে হবে! সেটি তো খোলামেলা কর্তৃপক্ষকে বলতে হবে। শোন দোস্ত! নিজের নেতৃত্বগুণ মাটি চাপা দিয়ে রাখলে নেতৃত্ব দেয়া যায়না। নেতৃত্ব দিতে চাই, দায়িত্ব পেতে চাই এটি কর্তৃপক্ষকে বলতে হয় এবং দায়িত্ব পেলে সেটিও নিষ্ঠার সাথে সম্পন্ন করতে হবে। তবেই না দায়িত্ব আসবে। একবার দায়িত্ব সুচারুভাবে সম্পাদন হলে তোর ঘাড়ে বহু দায়িত্ব এমনি এমনি চলে আসবে। তখন কিন্তু দম ফেলার ফুরসত পাবিনা। আবার কারও কারও চলা ফেরায় এমনিতেই নেতৃত্বগুণ প্রকাশ পায়। এটি একরকম ন্যাচারাল লিডারশিপ। by born লিডার যাকে বলে। তো তুমি অনেক বড় কিছু হতে চাও, মানুষ বা প্রতিষ্ঠানের জন্য অবদান রাখতে চাও সেটির জন্য তোমাকে ফিল্ডে থেকে স্বেচ্ছায় দায়িত্ব পালন করতে হবে। এই ধর, কারও রক্ত লাগবে। তুমি নানান জায়গায় ফোন দিয়ে সেটির সমাধান করে দিবে। আবার কোন একটি প্রোগ্রাম আয়োজন হবে -তুমি আগ্রহ নিয়ে কোন একটি কাজ করে দিবে। অফিসিয়ালি লিডার হতে সময় লাগতে পারে, সামাজিক বহু কাজ করেও তুমি মানুষের জন্য লিডার হতে পার। শুধু উদ্যোগটা দরকার। একটু সময় আর শ্রম দেয়া দরকার।

পরিবর্তনের সাথে অ্যাডপ্ট হওয়াটাই যথেষ্ট নয়

বিশ্বজুড়ে প্রতিটি ইন্ডাস্ট্রিতে মেশিন চাকরি করছে। শুধু করছেনা মেশিনগুলো দক্ষতার সাথে নিপুণভাবে কাজ করছে। যেকাজগুলো আগে মানুষ করতো। আমরা ক্রেডিট কার্ডে টাকা তুলছি। মেশিনে টাকা জমা হচ্ছে। হোয়াটস অ্যাপে ব্যাংকিং তথ্য জানছি। ডাক বিভাগের জায়গায় ই-মেইল রিসিভ করছি চোখের পলকে। অথচ কেউ কেউ এই পজিশনগুলোতে চাকরি করতো। পরিবর্তনের সাথে অ্যাডপ্ট হওয়াটাই যথেষ্ট নয়। আমাদের এমন কোন উপায় বা পথ খুজে বের করতে হবে যেটি সহজে অটোমেটেড করা যাবেনা। প্রতিনিয়ত লার্নিং এর মধ্যে থাকলে আমরা নতুন উপায়ের খোঁজ পেতে পারি। আরও বেশি এক্সপার্ট হতে পারি। কিছুক্ষেত্রে আপনি চাকরি পালটাতে পারেন। কিন্তু আজকের প্রয়োজনীয় দক্ষতা সামনের দিনগুলোতে অপ্রয়োজনীয় হয়ে যেতে পারে। সুতরাং ‘অনলি লারনিং’ আমাদেরকে পথ দেখাতে পারে।

সাফল্যের পাঠশালা

বিশ্বখ্যাত ভার্জিন কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা রিচাড ব্রানসন। যুক্তরাজ্যের এই ধনকুবের ১৬ বছর বয়স থেকেই ব্যবসা শুরু করেন। ছোট খাট অনেক ব্যবসা থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক মহাকাশ ভ্রমণ পর্যন্ত ছড়িয়েছে তার ব্যবসা। রিচার্ড ব্রানসন এর ‘ স্ক্রু ইট, লেটস ডু ইট‘ বইটির বাংলা অনুবাদ হল ‘সাফল্যের পাঠশালা‘। বণিক বার্তা প্রকাশন থেকে ২০১৩ সালে এটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। বইতে রিচার্ড ব্রানসন বলছেন আমার প্রতিটি শিক্ষাই কোনো না কোনোভাবে অন্যের জীবনে কাজে লাগানোর মতো। আমরা যা হতে চাই বা যা করতে চাই, চাইলেই তা করতে পারি। প্রথম পদক্ষেপটি অত কিছু না ভেবে নিয়ে ফেলুন।

চলুন কাজটি করে ফেলি অংশে লেখক বলছেন- স্বপ্ন থাকা খারাপ নয়। আমি স্বপ্ন দেখি বাস্তবতার আলোকে। যা অসম্ভব তা নিয়ে দিবাস্বপ্ন দেখতে আমি রাজি নই। আমি লক্ষ্যে বিশ্বাসী। লক্ষ্য স্থির করি। তারপর সেখানে পৌছানোর জন্য কাজ শুরু করি।

ঝুঁকি শনাক্ত করুন অংশে লেখক বলছেন- কোনো মানুষ বা কোনো আইডিয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আমার ৬০ সেকেন্ডের বেশি লাগেনা। এক্ষেত্রে আমি বড় বড় প্রতিবেদনের চেয়ে সহজাত বোধশক্তির ওপরই বেশি নির্ভর করি।

কোনো কিছু নিয়ে কখনো আফসোস করতে নেই অংশে লেখক নিজের জীবণের উদাহারণ টেনেছেন এভাবে- ফ্রেডি আমাকে আরো পরামর্শ দিলেন, এয়ারলাইনসের টিকিট সস্তা করবেনা। সেবার মানও নিচে নামাবেনা। তাহলে বড় এয়ারলাইন্সগুলো তোমাকে বিপদে ফেলবে। — তুমি বরং টিকিটের দাম একটু বেশি ধরে সেবার মানটা তাদের চেয়ে উন্নত করো। লোকজন আরাম চায় । আর আনন্দের কথাটা তারা ভুলে যায়না। ।১৯৮৪ সালে ভার্জি আটলান্টিক যখন যাত্রা শুরু করল, সেদিন একজন মানুষও বিশ্বাস করেনি এটি এক বছরের বেশি টিকবে। বড় বড় এয়ারলাইন্সের শীর্ষ কর্মকতারা বলতে লাগলেন আমি ব্যর্থ হব। কিন্তু তাদের কেউই আর এখন এ ব্যবসায় টিকে নেই। আমি ঠিকই টিকে আছি।

এইরকম নানা উপদেশ, মোটিভেশন, রিয়েল লাইফ স্টোরি দিয়ে সমৃদ্ধ অনূদিত গ্রন্থ সাফল্যের পাঠশালা।

অ্যাভারেজ -এর দিন শেষ

কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সকলে কি শতভাগ ঢেলে কাজ করেন? অনেকেই করেন। আবার কেউ কেউ করিনা। এই না করার কারনে পাশের কলিগদের উপর চাপ পড়ে। টোটাল প্রোডাক্টিভিটিতে প্রভাব পড়ে।
The New York Times এর কলামিস্ট Thomas Friedman এর বিখ্যাত একটা উক্তি শুনুন-অতীতে কর্মীদের অ্যাভারেজ স্কিল ছিল। তারা অ্যাভারেজ চাকরি করতো। উপভোগ করতো অ্যাভারেজ লাইফস্টাইল। কিন্তু অ্যাভারেজ এর দিন শেষ। সস্তায় রোবট, সস্তায় সফটওয়্যার, সস্তায় অটোমেশন, সস্তায় স্কিলড জনশক্তির যোগান চাকরির বাজারকে জটিল করে তুলছে। কোন ফিল্ডে আপনি আছেন সেটি বিষয় নয়। আপনি সে ফিল্ডে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে পারছেন কিনা? আমাদের চেষ্টা করে যাওয়া উচিত কিভাবে যার যার জায়গায় অসাধারণ অবদান রাখা যায়। ভ্যালু এড করা যায়। নিজেকে আলাদাভাবে প্রকাশ করা যায়। আসুন অ্যাভারেজ কাজ-কর্মের সাথে বাড়তি কিছু যোগ করি। কোম্পানিকে এগিয়ে নিয়ে যাই।

অনুবাদ ১০০ গ্রেট মার্কেটিং আইডিয়া

অনেকেই ফেসবুককেন্দ্রিক উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করছেন। উদ্যোক্তা বেড়ে যাওয়া সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ভালো। নতুন উদ্যোক্তাদের পণ্য বাজারজাতকরণে লেখক Jim Blythe ‘100 Great Marketing Idea’ বইটি পথ দেখাতে পারে। পড়তে পড়তে নতুন আইডিয়াও মাথায় আসতে পারে। বইয়ের শুরুতে লেখক বলছেন “সবাইকে খুশি রাখার চেষ্টা করা ভুল। বিশাল বিশাল প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকিদের জন্য কাজটা অসম্ভব। এমনকি অনেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানও আলাদা শ্রেণির কাস্টমার ধরতে নিজেদেরকে বিভিন্ন অংশে বা বিভিন্ন ব্রান্ডে ভাগ করে । বইয়ের সব আইডিয়া প্রয়োগ করতে যাবেননা। কারণ আপনার ইন্ডাস্ট্রির জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে।”

বিশ্বসেরা ব্রান্ডগুলোর মাকেটিং স্ট্রাটেজি ও আাইডিয়া অবলম্বনে লিখিত হয়েছে এই বই। বই থেকে দু’একটি আইডিয়া উল্লেখ করছি।
আইডিয়া: একটা প্রকাশনীর মাকেটিং ম্যানেজার টিজার ক্যাম্পেই চালাতে চাইলেন। মাকেটিং শিক্ষকদের নিকট চপস্টিক পাঠানো হল। প্যাকেটের গায়ে লিখা ছিল ’আগে খেয়ে নিন’। এতে শিক্ষকদের মাঝে কৌতূহল তৈরি হল। এক সপ্তাহ পর শিক্ষকদের টি-ব্যাগ পাঠানো হয়। ওপরে লিখা ছিল ’এবার পান করুন’। সবাই ভাবতে লাগল – এরপর কী আসবে? সবাই যখন অপেক্ষা করছে তখন পাঠানো হল বইয়ের একটা অধ্যায়ের স্যাম্পল। এই আইডিয়া পুরস্কার লাভ করে। মূল টাগেট ছিল মাকেটিংয়ের শিক্ষকবৃন্দ।

আইডিয়া: USP (Unique Selling Proposition) আপনার প্রোডাক্টকে অন্যদের থেকে আলাদা করে। তবে আপনি যেটাকে USP ভাবেন,কাস্টমার সেটিকে নাও ভাবতে পারে। রেস্টুরেন্টের মালিক হয়তো ভাবে, খাবারের মান হলো USP, কিন্তু কাস্টমারের চোখে ওয়েটাররাই হয়তো বেশি আকষণীয়। কে শুজ। ভালো মানের জুতা তৈরির জন্য বিখ্যাত। পরতে আরাম। টেকে বেশিদিন। অনেকেই ভাবতে পারে এটাই এই জুতোর USP । রিসার্চ করে জানা গেলো এই জুতো কে শুজের অন্য জুতোর মত শব্দ করেনা। কাস্টমারদের নিকট এটাই ছিল USP ।

এ তথ্য ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন তৈরি হল। গল্পটা এইরকম- এক স্ত্রী গোপনে স্বামীকে অনুসরণ করে দেখতে পায় তার স্বামী রেস্টুরেন্টে আরেক মহিলার সাথে খাবার খাচেছ। স্ত্রী তখন পেছন থেকে গিয়ে এক বাটি নুডুলস ঢেলে দেয় স্বামীর মাথায় । এটা সম্ভব হয়েছে কে শুজ ব্রান্ডের জুতা পরায়, কারণ কে শুজে কোনো শব্দ হয়না।

এইরকম ১০০টি আইডিয়া নিয়ে সাজানো বইটির বাংলায় অনুবাদ করেছেন এম এস সোহান ও হাসান আযীয। সম্পাদনা করেছেন মোহাম্মদ ইকরাম। নন্দন থেকে প্রকাশিত হয়েছে। রকমারি ডট কম হতে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন।

Employee of Apple brand

অ্যাপলের একজন কাস্টমার (কার্ডিফ, ইউকে) টুইটার বার্তায় লিখলেন, ‘একটু আগে আইফোনের নতুন রিপ্লেসমেন্ট পেলাম। যদিও স্ক্রিনটি আমার দোষেই ভেংগে গিয়েছিল।’ আরেকজন টুইট করলেন, ‘আমার মায়ের আইফোনটি পানিতে পড়ে যায়। হার্ডওয়ারের ক্ষতি হয়। আমিও ব্রান্ড নিউ রিপ্লেসমেন্ট পেলাম।’এক্সপেরিয়েন্সগুলো একদমই নতুন কিছু নয়। প্রকৃতপক্ষে আইফোন অ্যাপল স্টোর হতে ক্রয় করলে মাত্র ১ বছরের ওয়ারেন্টি দেয়া হয়। তাও আবার নানান রকম শর্ত থাকে। কিন্তু তাই বলে ফোন পানিতে ফেলে দেবে আর নতুন রিপ্লেসমেন্ট দাবি করবে এবং কোম্পানি নতুন দিবে- বিষয়টি এইরকম নয়। তবে অ্যাপলের ইমপ্লয়িরা মাঝে মাঝে এমনটি করে থাকে এবং এই ধরণের সিদ্ধান্ত নিতে তাদেরকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এইজন্য অ্যাপল যথেষ্ট ট্যালেন্ট এবং সাহসী ইমপ্লয়ি নিয়োগ দিয়ে থাকে । তারা কাস্টমারের সাথে সম্মানজনক ব্যবহার করে ও সুবিবেচনাযোগ্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

আপনি কোম্পানির মালিক। আপনি আপনার ইমপ্লয়িদের এমনভাবে empowered (সিদ্ধান্ত নেবার সামর্থ) করতে পারেন যাতে তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ইমপাওয়ার্ড এমপ্লয়ি কোম্পানির কাজে ভাল এনগেইজমেন্ট বা সম্পৃক্ততা থাকে। তারা ইমোশনালি কানেক্টেড হয় তাদের কাজে এবং গ্রাহককে সর্বোচ্চ সার্ভিস দিয়ে থাকে। এনগেইজমেন্ট কম আছে এমন এমপ্লয়ি প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করে। ফলে টার্নওভার কষ্ট বাড়ে, প্রোডাক্টিটিভিটি কমে এবং টিমমেটদের সাথে একতার ঘাটতি থাকে।

I love how reasonable Apple is, they have strict policies, but they know how to make good experience- Joel K.